ফের চালু হচ্ছে ব্যয়বহুল ও বহুল আলোচিত ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কিছুটা কমে আসার যুক্তি দেখিয়ে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি বলেন, দেশের যেসব জায়গায় ডিজেল ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নয়, সেই জায়গাগুলোতে থাকা কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুনরায় চালু করা হচ্ছে। এতে সাড়ে ৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে পারে।

মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে ১ হাজার ২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। এজন্য যে পরিমাণ ডিজেল লাগত বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি অফিস, দোকানপাট, শপিংমল ও অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে চালানো জেনারেটরে তার চেয়ে বেশি ডিজেল লাগছে। এতে একদিকে ডিজেলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অপর দিকে এসব জেনারেটরে বেশি ডিজেল ব্যবহার করে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তাই লোডশেডিং পরিস্থিতি উন্নতি ও ডিজেলের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে দক্ষ বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় গড়ে ২২ থেকে ৫৩ টাকা। অথচ গড়ে প্রতি ইউনিট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হচ্ছে মাত্র ১৫ পয়সা।

আর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ৪ টাকা। প্রাকৃতিক গ্যাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ আরও কম। ডিজেল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে একদিকে তেল কিনতে বিপুল অঙ্কের ডলার ব্যয় হবে অপরদিকে এই বিদ্যুতের দাম দিতে সরকারি কোষাগারের বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় হবে। তাই এই মুহূর্তে ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু না করাই ভালো।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৬০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৬৬ বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে ১০ হাজার ৮৭৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যা মোট উৎপাদনের ৫১ শতাংশ। প্রাকৃতিক গ্যাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও কম। তাছাড়া এই গ্যাস দিয়েই চলে শিল্প কলকারখানায় ব্যবহৃত বয়লার ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও। কিন্তু তারপরও দেশীয় গ্যাস উৎপাদনে সরকার বড় ধরনের কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না। মাটির নিচে বিশাল গ্যাস ভান্ডার থাকলেও রহস্যজনক কারণে এ গ্যাস উৎপাদনে নানা গড়িমসি করছে জ্বালানি বিভাগ।

পিডিবির তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ (আমদানিসহ) ছিল সাত হাজার ৮৫২ কোটি ৫৬ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে মোট ব্যয় হয়েছে ৪৯ হাজার ২৩৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ৬ টাকা ২৭ পয়সা। এর মধ্যে সবচেয়ে কম ব্যয় হয় জলবিদ্যুতে। সবচেয়ে বেশি ব্যয় ছিল ডিজেলে ৫৩ টাকা।

রাকিব/এখন সময়